সিলেটে জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ



বর্ষায় প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন এক ধরনের সাজে। এই সময়ে প্রকৃতি তার সব রংহ ছড়িয়ে দেয় মানুষের মাঝে। যা দেখলে সবার মন ভরে যায়। প্রকৃতির এমন রুপ দেখতে বর্ষার রণী সিলেট দর্শনে বেড়িয়ে পড়েন পর্যটকরা। 


সিলেটের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সেখানকার সৌন্দর্য শুধু বর্ষায় গেলেই দেখতে পাবেন। তাই বর্ষার সময় সিলেট ভ্রমণে গেলে অবশ্যই সেসব স্থানে যেতে ভুলবেন না কিন্তু। 


বর্ষায় সিলেট ভ্রমণে গিয়ে যা যা দেখবেন-


জাফলং

প্রকৃতির কন্যা হিসেবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত জাফলং। সিলেট ভ্রমণে যাবেন অথচ জাফলং এ যাবেন না তা কী কখনো হয়। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলং কে করছে আকর্ষণীয়। 


সিলেট শহর হতে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং অবস্থিত। জাফলং এ শীতকালে এবং বর্ষা কালে সৌন্দর্য ভিন্ন। কয়েকহাজার ফুট উপরে থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণাধারার দৃশ্য যেকারো মন কাড়বে। 


সীমান্তের ওপারে ইন্ডিয়ান পাহাড়ের টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উচু পাহাড়ের গহিন অরণ্য ও শুনশান নীরবতার কারণে এলাকাটি পর্যাটকদের দারুন ভাবে আকৃষ্ট করে। 


কীভাবে যাবেন ?

সিলেট জেলা সদর থেকে সড়ক পথে জাফলং এর দূরত্ব মাত্র ৫৬ কিলোমিটার। সিলেট শহর থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যেতে পারবেন জাফলং। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ভাড়া নেয় প্রতিজন ৫৫ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৭০০-২০০০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ৭০০-৮০০ টাকার মতো নেয়। 


থাকবেন কোথায় ?

জাফলং থাকার জন্য তেমন ব্যবস্থা নেই। যে কয়েকটা আছে তা হলো জেলা পরিষদের নলজুরী রেস্ট হাউস ( থাকতে হলে আগে থেকেই অনুমতি নেওয়া লাগবে ) এবং শ্রীপুর পিকনিক স্পট উল্লেখযোগ্য। কিছু জায়গায় বোডিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও শ্রীপুর ফরেস্টের জন্য বাংলো আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। 


মাধবকুন্ড ইকোপার্ক 

সিলেটের মৌলভীবাজারে জে.লারবড়লেখা উপজেলার কাঠাতলীতে অবস্থিত। পর্যটন কেন্দ্র স্থান হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউস ও রেস্টুরেন্ট আছে। এই ইকোপার্ক এর অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান এবং চা বাগান। 


লালাখাল

স্বচ্চ নীল জলরাশি। দুই ধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অপুরূপ সৌন্দর্যময় এক স্থান হলো লালাখাল। দীর্ঘ নৌ পথে ভ্রমণে স্বাধ যেকোনো পর্যটকদের কাছে এক দুর্লভ আকর্ষন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত এর স্থান এটা। সেইসাথে রাতের সৌন্দর্য সেখানকার সৌন্দর্য আরো দিগুন বেড়ে যায়। 


সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত এই লালাখাল। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই অবস্থিত লালাখাল। চেরাপুঞ্জির পাহাড় থেকে উৎপন্ন নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে। 


কীভাবে যাবেন ?

সিলেট শহর থেকে লালাখালের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। বাস, মাইক্রোবাস, টেম্পু করে আপনি যেতে পারেন সেখানে। লালাখালে থাকার সেরকম কোন সুবিধা নেই। পর্যটকরা দিনের বেলায় লালাখাল ঘুরে রাতে চলে আসেন সিলেট শহরে। 


বিছনাকান্দি

মেঘালয়ের কোলঘেঁষে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত বিছানাকান্দি। এটি মূলত একটি পাথরের কোয়ারী। হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে বিছানাকান্দি যাওয়ার পথটা অনেক সুন্দর। পথের দু'পাশে সবুজের ছড়াছড়ি। যেখানে পাথর নেই সেখানে নদী বেশ খরশ্রোত। 


কীভাবে যাবেন ? 

বিছনাকান্দি যাওয়ার রাস্তা অনেক খারাপ। ভালো হয় অম্বরখানা থেকে সিএনজি নিয়ে গেলে। প্রতি সিএনজি ৪০০-৫০০ টাকা নিবে হাদার পাড় পর্যন্ত। সেখানে নেমে নৌকা রিজার্ভ করবেন। পান্তুমাই আর বিছানাকান্দি একসাথে ভাড়া করলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা নিবে। নৌকায় একসাথে ১০ জনের মতো উঠতে পারবেন।


রাতারগুল

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। সেখানকার সৌন্দর্য আপনাকে অনেক আকৃষ্ট করে তুলবে। হিজল গাছের ছাড়ি ডুবে আছে পানিতে। তার ফাক দিয়ে নৌকায় চলাচল করার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন এই জলাবনে গেলে। ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা নিয়ে প্রবেশ করতে হয় এই বনে।


নানা ধরনের পাখির ও দেখা পাবেন সেখানে গেলে। অবশ্যই মনে রাখবেন জলাবন একটি সুরক্ষিত বন, এখানে কোন রকম হৈ হুল্লোড় করবেন না। অপচনশীল কোন কিছু পানিতে ফেলবেন না। বনের মধ্যে একটা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে সেখানে উঠে আপনি পুরো বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। 


কীভাবে যাবেন ?

সিলেট শহরের যেকোনো জায়গা থেকে মোটরঘাট সিএনজি নিয়ে আসবেন। মোটরঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে বনে যাবেন। প্রতি নৌকা ৬০০ করে ভাড়া নেয় বসতে পারবেন চারজন করে। 


হাকালুকি হাওর

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওড়। এর আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। শুধু বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। ভূ- ত্বাতিকভাবে এর অবস্থান উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশ। এই হাওড়ে ৮০-৯০ টির মতো ছোট বড় বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।


শেষে কিছু কথা-

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সাথে রেইনকোট/ ছাতা রাখবেন। প্রয়োজনে ড্রাই ব্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন। বর্ষার সময় অধিকাংশ গন্তব্যে পানি থাকবে। তাই কেউ সাতার না জানলে সাথে লাইফ জ্যাকেট নিবেন।



Previous Post Next Post