আষাঢ়ের শেষ লগ্নে এসেও সেরকম বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে মধ্যে দুএকবার বৃষ্টি হলেও সেরকম গরম কমে না। কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গরম। এই আবহাওয়ায় আমাদের খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে একটুতেই অসুস্থ হতে পারে। ডা: মনিরুজ্জামান খান বলেন, আবহাওয়াটা এমন যে মাঝে মাঝে প্যাচপ্যাচ বৃষ্টি আর বাতাসে চরম আদ্রর্তা যা আমাদের ত্বকের জন্য নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সময়ে সূর্যর অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচন্ড গরম হলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক স্বাভাবিক উজ্জতা হারায়। এ সময়ে আমাদের প্রচুর ঘাম হয়, যা আমাদের ত্বকে নানা ধরনের সংক্রমণ ও ছাত্রাকজনিত সংক্রমণ এর হারকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা রোদে কাজ করেন তোদের ত্বকে পোড়া ভাব দাগ ও মেছতার কালো দাগ দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়ে আমাদের সকলকে ত্বকের যত্নে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে ত্বক পানি হারিয়ে ফেলে। তাই ত্বক আদ্র ও সুস্থ রাখতে নিয়মিত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন। রোদে বা সূর্য লোকে বের হলে ১৫-২০ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করুন। এসব সতর্কতার বাইরে কিছু খাবার এনে দিতে পারে তৃপ্তি। এসব খাবার যেমন পুষ্টিকর তেমনি ত্বককে ঠান্ডা ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
সহজলভ্য কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নিন-
১. কলা
দিনের খাদ্য তালিকায় কমবেশি কলা সবার থাকে। তা কাঁচা অথবা পাকা হোক। উপাদেয়, সস্তা, এমন সবজি বা ফলের মধ্যে কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। ভিটামিন'এ'বি'সি'র উৎস ও কলা। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, লৌহ ও অন্যকিছু খনিজ উপাদান। কলা পাকা অথবা কাঁচা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা করে পটাশিয়াম। গরমের সময় কলা খেতে পারেন। এছাড়াও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও শস্য।
২. পুদিনাপাতা
ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার ক্ষমতা আছে পুদিনাপাতার। ইংরেজিতে যার নাম মিন্ট। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন 'এ' দ্বারা পরিপূর্ণ পুদিনাপাতা। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এমন একটি উপকরণ, যা অতিরিক্ত গরমে ছোট বড় প্রায় সবার বদহজম বা ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা দেখা দেয়। পুদিনাপাতা পেটের তাপমাত্রা কমিয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। পিষে ধনেপাতার মত তরকারিতে ছিটিয়ে বা সালাদের সাথে খাওয়া যায়।
৩. শসা বা ক্ষীরা
শসায় রয়েছে ৯৬.৭ শতাংশ পানি। এই গরমে শসার সালাদ রাখুন প্রতিবেলায়। শসার সাথে ধনেপাতা কুচি করে দিলে স্বাদ বাড়বে। পাশাপাশি ননিবিহীন দুধের তৈরি দই, পুদিনাপাতা আর বরফ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস তৈরি করতে পারেন। এই জুস আপনার শরীর সতেজ রাখবে এবং তৃষ্ণা ও মেটাবে।
৪. টমেটো
টমেটোতে রয়েছে শতকরা ৯৪.৫ শতাংশ পানি। এছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, লাইপোকেন, ক্যারোটিন, রিবোফ্লেভিন, ক্যালসিয়াম ও লোহা থাকে। টমেটোর জুস অথবা সালাদ দুটোই সুস্বাদু। এছাড়া রান্না করলেও টমেটোর পুষ্টি গুণ কমে না। তাই গরমের সময় টমেটোর সূ্প অথবা ঝোল খেতে পারেন।
৫. তরমুজ
গরমে যখন প্রাণ আইঢাই,এক ফালি তরমুজ খেয়ে নিন। বরফ দেওয়া শরবত ও খেতে পারেন তরমুজের। হাঁপিয়ে যাওয়া প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে। তরমুজ গরমের ফল। হাটবাজার বা ফলের দোকানে এখন থরে থরে সাজানো থাকে সুমিষ্টত তরমুজ। তরমুজে রয়েছে শতকরা ৯১ দশমিক পাঁচ ভাগ পানি। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপকরণ লাইকোপেন। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণের এই ফল গরমে আমাদের অনেকটা স্বস্তি দেয়।
৬. পেঁয়াজ
গরমে পেঁয়াজ বিশেষ করে লাল পেঁয়াজ অনেক উপকারী। কোয়রসেটিন নামে এক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে এতে। যার এন্টিহিস্টামিন প্রভাব রয়েছে। গরমে হিট যার্শ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। পেঁয়াজ আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফাইটোকেমিক্যাল নামে একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে পেঁয়াজে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ত্বক সুস্থ থাকে। ত্বক সুস্থ রাখতে খাবারে বেশি করে পেঁয়াজ রাখা উচিত।
৭. ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী শুনে অনেক কোচকালেও থাকলেও একে সবাই এলোভেরা নামেই চেনেন। ঔষধি এই ভেষজের গুণাগুণ এই অঞ্চলের মানুষের পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে ও জানা। শরীরে নানা পুষ্টির যোগান দিতে ও অসুখ বিসুখ সারিয়ে তুলতে এলোভেরা অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য পানীয় যেমন কার্যকর, তেমনি তা বাহ্যিক ভাবে ব্যবহারযগ্য। এলোভেরার রস পান করে ও এটা সালাদ হিসেবে খেয়ে ত্বক এবং চুলে ব্যবহার করে এই গরমে দারুন উপকার পাবেন।
৮. লাল মরিচ
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বলেন, ঝালযুক্ত খাবার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ঘাম সৃষ্টি করে। ঘাম শুকালে শরীর ঠান্ডা হয়। লাল মরিচে যে ক্যাপসিসিন থাকে তা শরীরের তাপমাত্রা না বাড়িয়ে ঘাম সৃষ্টি করে। নতুন এক খবরের বরাত দিয়ে জি নিউজে বলা হয়েছে, প্রতিদিন লাল মরিচ খেলে মৃত্যুর হার হ্রাস করে। হৃদয়রোগ ও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের পরিমাণ ১৩ শতাংশ কমিয়ে আনে।